
সমুদ্রসৈকতে আড্ডায় মেতেছিলেন তিন বন্ধু। হঠাৎ একজন গলা ছেড়ে গান ধরেন। তার সাথে গাইতে থাকেন বাকিরাও। পরিচিত সেই মহলে আগমণ ঘটে এক আগন্তুকের। তিনিও সুর মেলাতে থাকেন। বাধা না দিয়ে আড্ডা শেষে হোটেলের রুমে ফেরেন বন্ধুরা। রাতে টেলিভিশনের পর্দায় ও ফেসবুকে ভেসে ওঠা এক ব্যক্তির ছবিতে আটকে যায় তাদের দৃষ্টি।
মনে সন্দেহ দানা বাঁধলে পরদিন তারা আবার যান সৈকতে। মনে মনে খুঁজতে থাকেন ওই ব্যক্তিকে। একপর্যায়ে লোকটিকে পেয়েও যান তারা। ফেসবুকে পাওয়া ছবির সঙ্গে তার চেহারার মিল দেখে গড়ে তোলেন সখ্য। কথা বলার ফাঁকে জেনে নেন তার নাম। নাম জানার পর তারা টেনে আনেন কুমিল্লার প্রসঙ্গ। লোকটি তখন স্বীকার করেন, তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি দুর্গাপূজার সময় পবিত্র কোরআন রাখেন মণ্ডপে।
সব হিসাব মিলে গেলে তার সাথে ছবি তোলেন বন্ধুরা। সেই ছবি পাঠানো হয় পুলিশ কাছে। এরপর পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় সেই ব্যক্তিকে। এভাবেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ইকবাল হোসেন, যিনি কুমিল্লার ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন।
যাদের সহায়তায় ইকবাল ধরা পড়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা হলেন নোয়াখালীর চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মিশু, একই সংগঠনের সাজ্জাদুর রহমান অনিক এবং সাবেক কর্মী সাইফুল ইসলাম সাইফ। তাদের মধ্যে মিশু ও অনিক ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ুয়া। আর সাইফ কর্মরত মৎস্য বিভাগে।
ছাত্রলীগ কর্মী মিশু জানান, ১৮ অক্টোবর সোমবার নোয়াখালী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে যান তিনি ও অনিক। সকালে তাদের সাথে যোগ দেন সেখানে থাকা সাইফুল। দুই দিন পর বিকেল ৪টার দিকে তারা সুগন্ধা বিচের দরিয়ানগরে ঘুরতে যান। সেখানে গান গাওয়ার সময় একজন অপরিচিত লোক তাদের সাথে সুর মেলাতে থাকেন। রাতে তারা হোটেল রুমে যাওয়ার পর টেলিভিশন এবং ফেসবুকে ছবি দেখে লোকটিকে ইকবাল বলে তাদের সন্দেহ হয়।
মিশু বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা সুগন্ধা পয়েন্টে গেলে ইকবালের সাথে তাদের আবার দেখা হয়। এরপর আমরা ইকবালের সাথে সখ্য গড়ে তুলি। একপর্যায়ে ইকবাল পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে নাশতা ও সিগারেট খাইয়ে কৌশলে আটকে রাখি। পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তখন ইকবাল বলেন, আল্লাহ আমাকে দিয়ে এটা করায়েছেন, সবই তার ইচ্ছা।
মিশু বলেন, ইকবালের ছবি তুলে মোবাইলে নোয়াখালীর এএসপি শাহ ইমরানের কাছে পাঠাই। তিনি আমাদের কুমিল্লার পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর দেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপারের কাছে ছবি পাঠালে তিনি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে জানান। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ এসে তাকে (ইকবাল) আটক করে নিয়ে যায়।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আদনান জানান, মিশু, অনিক ও সাইফ তিনজনই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে সাইফুলের চাকরি হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরে। মিশু ও অনিক সংগঠনের প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। দীর্ঘ ১০ বছর চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় তারা নিজেদের সংগঠনের সিনিয়র কর্মী হিসেবে দাবি করেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মিশু ও অনিক কক্সবাজার থেকে চৌমুহনীতে এসে পৌঁছান।
বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ ইমরান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিশু ও অনিক যোগাযোগ করলে তাদের কুমিল্লা পুলিশ সুপার ও কক্সবাজার পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিই। এর পরই ইকবালকে আটকের খবর পাই।
এবিএনওয়ার্ল্ড/এফআর